জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
আজ বিশ্ব প্রাণী দিবস। প্রাণীর অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতি বছর ৪ অক্টোবর দিবসটি পালন করা হয়। মানুষের খাদ্য শৃঙ্খলকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাণীদের ভূমিকা অত্যন্ত অপরিহার্য।
বিরল প্রজাতির পাখির বেআইনি ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার বাড়ছে। আর এই জন্য নিরাপদ রুট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। মোটা অঙ্কের মুনাফার লোভে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে অসহায় পাখির জীবন। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে প্রায়ই বাংলাদেশে ঢোকা শত শত বিদেশি পাখি জব্দ করা হলেও অনেক ঘটনায় থেকে যায় আড়ালে। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক সংস্থা সাইটিসের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী বন্যপ্রাণী পাচার ও আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক এ সংস্থার নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রাণীসহ সাইটিস নির্ধারিত পণ্য বিশেষ করে পাখি আমদানি-রপ্তানি করা যাচ্ছে না। সাইটিসের শর্ত পূরণে ৯০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হলেও এখনও কাটেনি নিষেধাজ্ঞা।
আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব প্রাণী দিবস। প্রাণীদের কল্যাণে ও তাদের অধিকার রক্ষায় প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব প্রাণী দিবস। সারাবিশ্বে যুক্তরাজ্যভিত্তিক নেচার ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি প্রাণিবিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা দিবসটি পালন করে।
গত চার বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশি-বিদেশি পাখি কেনাবেচার অস্বাভাবিক বিস্তার হয়েছে বাংলাদেশে। এ ছাড়া রাজধানীর কাঁটাবনসহ বিভিন্ন পাখির বাজারে রীতিমতো উৎসব করে পাখি প্রদর্শিত হচ্ছে। গত বছরের ২০ মে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জব্দ হয় ৬৯টি বিদেশি পাখি। এর মধ্যে রয়েছে– সাইটিস-১ তালিকার হায়াসিন্থ ম্যাকাও, সাইটিস-২-এর তৌকানট পাখি। একই বছরের ৩০ আগস্ট এই বিমানবন্দরে উদ্ধার হয় ৩১টি গোল্ডেন প্যারাকিট, ব্লু থ্রোটেড ম্যাকাও, স্কারলেট ম্যাকাও, মিলিটারি ম্যাকাও, রুবালিনা ম্যাকাও এবং রেড অ্যান্ড গ্রিন ম্যাকাও।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যাকাও শুধু অ্যামাজনে থাকে, আর কয়েকশই মাত্র টিকে আছে। ছোট কাঠের বাক্সে ঠাসাঠাসি করে আরও নানা পাখির মধ্যে মিশিয়ে এদের আনা হয়। এসব চালান থেকে নিষিদ্ধ পাখি চিহ্নিত করা কষ্টসাধ্য।
সাইটিস বলছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে হাজারের বেশি সবুজ-পাখা ম্যাকাও বাংলাদেশে ঢুকেছে। ব্রাজিল, মেক্সিকো, সাইপ্রাস, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও গায়ানা থেকে এসব এনে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর ব্যবহার করে পাঠানো হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে।
১৯৮২ সাল থেকে সাইটিসের সদস্য বাংলাদেশ। তাই তাদের তালিকাভুক্ত ৬ হাজার ৬০০ প্রজাতির প্রাণী আমদানি-রপ্তানি নিষিদ্ধের শর্ত পূরণে রয়েছে বাধ্যবাধকতা। ‘পোষা পাখি পালনের নীতিমালা ২০২০’ আধুনিকায়নসহ সাইটিসের চারটি প্রধান সুপারিশের একটিও বাস্তবায়ন করতে পারেনি বাংলাদেশ। অবশ্য সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। পোষা পাখি পালকদের বাধ্যতামূলক লাইসেন্স গ্রহণ, পোষা পাখিদের চিহ্নিতকরণ রিং পরানো, ব্যক্তিমালিকানাধীন পোষা পাখির সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ জামান বলেন, প্রাণীগুলোকে তাদের বাসস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন করে খেলনার মতো ব্যবহার করতে নির্মম মানুষদের কোনো দ্বিধা হয় না। প্রায়ই অপরাধের তদন্ত ও শাস্তি হয় না। ফলে এই অপরাধ আরও লাভজনক হয়ে উঠেছে। নীতিমালা আধুনিক করা দরকার, যাতে আর দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে না পারে।
বিশ্ব প্রাণী দিবস সর্বপ্রথম হেনরিক জিম্মারমেন নামের একজন জার্মান লেখক ও প্রকাশক মেন্স উন্ড হুন্দ (মানুষ ও কুকুর) নামের একটি ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেছিলেন। তিনিই প্রথম ১৯২৫ সালের ২৪ মার্চ জার্মানির বার্লিন স্পোর্ট প্যালেসে এ দিবস উদযাপন করেন। সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেন।
পরে ১৯৩১ সালে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের এক সম্মেলনে ৪ অক্টোবরকে বিশ্ব প্রাণী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সেই থেকে প্রাণীদের কল্যাণার্থে ও তাদের অধিকার রক্ষার্থে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব প্রাণী দিবস। সারাবিশ্বে দিবসটি পালন করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ন্যাচার ওয়াচ ফাউন্ডেশন। এছাড়াও দেশে দেশে প্রাণী কল্যাণমূলক সংস্থা দিবসটি পালন করে থাকে।