কৃষি সংবাদ প্রতিনিধি শেরপুর:
শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্তে ধান ক্ষেতের পাশে দেওয়া বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে একটি বন্যহাতির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জেনারেটর ও জিআই তারসহ এক কৃষককে আটক করেছে বন বিভাগের কর্মকর্তারা। গত বৃহস্পতিবার রাতে নালিতাবাড়ীর বাতকুচি টিলাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বনবিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ধান পাকার মৌসুম এলেই সীমান্তজুড়ে হাতির তাণ্ড শুরু হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যহাতির একটি বিশাল দল কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়েছে।
কৃষকরা হাতির কবল থেকে ফসল বাঁচাতে মশাল জ্বালিয়ে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ও বাঁশি বাজায়। অনেকে ক্ষেতের পাশে বৈদ্যুতিক জেনারেটরের জিআই তার দিয়ে ঘিরে রাখে। বৃহস্পতিবার রাতে ৩০টির বেশি হাতি বাতকুচি টিলাপাড়া এলাকায় যায়। এ সময় একটি হাতি শহীদুল ইসলামের ক্ষেতের পাশে বৈদ্যুতিক জিআই তারে জড়িয়ে মারা যায়। অন্য হাতিগুলো মৃত হাতিটিকে ঘিরে রাখে। কয়েক ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধার করেন বন বিভাগের কর্মীরা।
রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বৈদ্যুতিক খোলাতারের স্পর্শে এক হাতি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। ময়নাতদন্ত শেষে সেখানেই হাতিটি মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। কৃষক শহীদুলের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।গত এক দশকে শেরপুরের গারো পাহাড়ে ৩১টি হাতি প্রাণ হারিয়েছে। বেশিরভাগ হাতির মৃত্যু হয়েছে বৈদ্যুতিক ফাঁদে, নয়তো ধারালো অস্ত্রের আঘাতে। আর বন্যহাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। এ ছাড়া বাড়ি-ঘরসহ দুই হাজারের অধিক হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। হাতিকর্তৃক যে কোনো ক্ষতির বিপরীতে আবেদন করলে বন বিভাগ ক্ষতিপূরণ দেয়।
সেইভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারন্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, ধানক্ষেত রক্ষার নামে কতিপয় সংঘবদ্ধ চক্র জিআই তারের ফাঁদ পেতে হাতি হত্যা করে। হাতিদের খাবার সংকট রয়েছে। বাধ্য হয়ে তারা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসে। ফসল নষ্ট নওয়ায় বন বিভাগ ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। তারপরও হাতি হত্যা থামছে না।
শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষণ সাদেকুল ইসলাম খান বলেন, বন্যহাতি যেন মারা না যায়, এ জন্য আমাদের জনসচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। শেরপুরে ৩৪টি ইআরটি টিম আছে। এই টিমের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করছি।