1. admin@krishisangbad.com : admin :
সমতলের অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সরকার - কৃষি সংবাদ
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন

সমতলের অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সরকার

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৬৪ বার পঠিত
পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য (সচিব) জাহাঙ্গীর আলম। শ্রীমঙ্গল, সিলেট প্রকল্প কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এ সময়ে তিনি সুবিধাভোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন।

সুমন ইসলাম :

সমতলের পিছিয়েপড়া মানুষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। অবহেলিত এসব মানুষকে প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তথা দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় গত পাঁচ বছর ধরে বাস্তবায়ন হচ্ছে, ‘সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প।

প্রকল্প সূত্র জানায়, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীভুক্ত প্রকল্পটি ২০১৯ সালের অক্টোবরে শুরু হলেও করোনা ও রাজনীতির অস্থিরতার কারণে কিছুটা শ্লথ হওয়ায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার প্রকল্পটি জনগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছেন। তার ঐকান্তিক চেষ্টা ও পরামর্শে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির মেয়াদ দেড় বছর বৃদ্ধি করেছে। যা ১৯ নভেম্বর ২০২৫ থেকে দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন করে ৩০ জুন, ২০২৬ পর্যন্ত পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী জনসংখ্যার প্রায় ৪২ শতাংশের বসবাস পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবং বাকি ৫৮ শতাংশ লোক বাস করে সমতল ভূমিতে। পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা। পক্ষান্তরে সমতলে বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে সাঁওতাল, ওরাও, বর্মন, খাসি, গারো ইত্যাদি অন্যতম। দরিদ্রতার সঙ্গে সঙ্গে সমতলের আদিবাসীদের দুই-তৃতীয়াংশ ভূমিহীন তার মধ্যে সাঁওতাল, মাহাতো, পাহান প্রভৃতি জনগোষ্ঠীসমূহে ৯৩ ভাগেরও বেশি ভূমিহীন। পশ্চাৎপদ এ অনুন্নত জনগোষ্ঠীর সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে, দেশের সার্বিক উন্নয়নের মূল-ধারায় সম্পৃক্ত করতে এবং দ্রুত তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা পালনে কাজ করছে এই প্রকল্প। এটি দেশের সমতল জেলাসমূহে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যষিত ২৯টি জেলার ২১০টি উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, এই প্রকল্পটি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পের একটি। করোনার সময় ছাড়া অগ্রগতি বেশ ভালো। এ কারণেই মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। বাড়িয়েছে কিছুটা আওতাও। পরিকল্পনা কমিশনের এই প্রকল্প নিয়ে মধ্যবর্তী প্রতিবেদন সন্তোষজনক। সমতলের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

প্রকল্প পরিচালক ডা. অসীম কুমার দাস বলেন, বিগত ৫ অর্থবছরে ২৯ জেলার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭১জন সুফলভোগী নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, ৬ হাজার ৯১৪টি পরিবারের প্রতিটিকে একটি উন্নত জাতের ক্রসব্রিড বকনা ও ৭০০০ টাকা মূল্যের অস্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ উপকরণ এবং ২২৫ কেজি দানাদার খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। ২৩ হাজার ২৪৬টি সুফলভোগী পরিবারের প্রতিটিকে ২০টি করে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯২০টি মুরগি বিতরণ ও ৯ কেজি করে দানাদার খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে, ২৯ হাজার ১৭৫টি পরিবারের মধ্যে মুরগির শেড বিতরণ, ২৯ হাজার ৯৮৩ সুফলভোগী পরিবারের প্রতিটিকে ২০টি করে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৬৬০টি হাঁস ও ৯ কেজি করে দানাদার খাদ্য, ২৯ হাজার ৯৮৩টি পরিবারের মধ্যে হাঁসের শেড, ২৬ হাজার ৩৩৬ সুফলভোগী পরিবারের প্রতিটিকে ২টি করে ভেড়া বিতরণ, স্থায়ী বাসস্থান নির্মাণে ৫০০০ টাকা করে অনুদানসহ ২৭ কেজি দানাদার খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। ৪ হাজার ৫৫৮টি সুফলভোগী পরিবারে একটি করে হৃষ্টপুষ্টকরণ গরু ও ৭০০০ টাকা এবং ২৭০ কেজি করে দানাদার খাদ্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ৭৭ হাজার ৮৬০ জন সুফলভোগীকে প্রশিক্ষণ, ২ লাখ ৪৭১০টি লিফলেট ও বুকলেট বিতরণ। ফিল্ড ফেসিলিটেটরদের মাঝে ২১০টি বাইসাইকেল ও ২১০টি কুলবক্স বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক ৮২ জন সুফলভোগীদের মাধ্যমে ঘাস চাষ প্লট স্থাপন এবং ৮২টি অস্থায়ী ঘাসের বাজার স্থাপন করা হয়েছে।

প্রকল্পের মধ্যবর্তী মূল্যায়ন প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, চলমান এ প্রকল্পের বাস্তবায়িত এবং বাস্তবায়নাধীন কার্যাদি পর্যালোচনা ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণের নিমিত্তে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে পরিকল্পনা কমিশন, অর্থ বিভাগ, আইএমইডি ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি সমন্বয়ে অনুমোদিত ডিপিপি’র আলোকে মধ্যবর্তী মূল্যায়ন কমিটি প্রকল্পের ৪টি অঞ্চলের ১২টি জেলা থেকে ২০টি উপজেলা নির্বাচন করা হয়। মধ্যবর্তী মূল্যায়ন কমিটির সদস্যবৃন্দ কর্তৃক প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন ও তথ্য সংগ্রহ করে।

প্রকল্পের সামগ্রিক ও অঙ্গভিত্তিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির অঙ্গভিত্তিক কার্যক্রম এবং ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকল্পটির প্রধান প্রধান খাতের ব্যয় হলো প্রাণিসম্পদ উপকরণ যথা বকনা, ভেড়া, প্রাণীর খাবার ও ওষুধ, পশুপালনের গৃহ নির্মাণসামগ্রী সংগ্রহ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগোষ্ঠীর মাঝে তা বিতরণ করা। সমাজের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সুবিধাভোগীরা বকনা ও ভেড়া পেয়ে প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছেন, প্রকল্পটি সফলভাবে সমাপ্তিতে এসডিজি গোল ১০ এর ১০.২ অর্জনে সহায়ক হবে। সুফলভোগী হিসেবে ৫০ শতাংশ নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে। মধ্যবর্তী মূল্যায়ন কমিটি পরিশেষে এ প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হিসেবে প্রাণিসম্পদ উপকরণ যথা প্রাণী, প্রাণীর খাবার, ওষুধ, প্রাণী পালনের গৃহ নির্মাণসামগ্রী সংগ্রহ এবং প্রকল্পটি অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে প্রকল্পটির কার্যক্রম দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত হয়েছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উন্নয়নে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারাও তাদের দেশে একই ধরণের কর্মসূচি নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছে বলে জানাগেছে।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ কৃষি সংবাদ
Theme Customized By Shakil IT Park