কৃষি সংবাদ প্রতিনিধি বরগুনা:
সাগরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে দিশেহারা জেলেরা। শুধু জেলে নয়, মাছ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যরাও। এ অবস্থায় ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে অনেক ট্রলার মালিক বন্ধ রেখেছেন মৎস্য শিকার। কম মাছ পাওয়ায় পাথরঘাটাস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রেও রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
পাথরঘাটার মৎস্য অবতারণ কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, পর্যাপ্ত মাছ নেই এই কেন্দ্রে। সাগর থেকে ফিরে আসা ট্রলারগুলোয় মাছ কম থাকায় হতাশায় জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। খরচের টাকা না উঠায় প্রতি ট্রিপেই বাড়ছে ঋণের বোঝা। ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, পরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা। সাগরে মাছ না পেয়ে ঘাটে বেধে রাখা হয়েছে সারি সারি ট্রলার।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিন বিক্রি হওয়া মাছের মোট দামের সোয়া এক শতাংশ রাজস্ব আদায় করে সরকার। গড়ে প্রতিদিন কোটি টাকার মাছ বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০-৪৫ লাখ টাকার মাছ। এতে এ অবতরণ কেন্দ্রে কমেছে রাজস্ব আদায়। গত দুদিনে এ অবতরণ কেন্দ্র থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র এক লাখ টাকা।
জেলেদের অভিযোগ, সাগরে মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে মিলিয়ে না দেওয়ার ফলে বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞার সময়ে অবাধে মাছ ধরে নিয়ে যায় ভারতের জেলেরা। আবার নিষেধাজ্ঞার সময় কিছু ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেলেও নিষেধাজ্ঞার পর অবৈধ ট্রলিং ট্রলারের জালে আটকে পড়ছে ডিম ও ছোট ছোট পোনা মাছ। ফলে ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছই বিলুপ্তির দিকে। জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, এই ট্রলিংগুলো প্রভাবশালীদের হওয়ার প্রশাসন চুপ থাকে।
সাগরে মাছ না পেয়ে জেলে মো. সগির বলেন, আগে নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এবার মাছই নেই। সাধারণত অবরোধের সময় ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ে এবং বাচ্চাগুলো ছোট থাকে। সাগরে এত পরিমাণ ট্রলিং বোট চলে যে সামান্য মাছের ডিমও ওদের জালে আটকা পড়ে। সব ছোট মাছ ওদের জালের সঙ্গেই মরে যায়। এ অবস্থায় চললে ইলিশ মাছ ভবিষ্যতে আর থাকবে না।
ট্রলার মালিক জব্বার শেখ বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ না পেয়ে অনেক ট্রলার মালিকই তাদের বোট ঘাটে বেঁধে রেখেছেন। বর্তমানে একটা ট্রলার সাগরে পাঠাতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার বাজার লাগে। সেখানে অনেক বোট ৫০ হাজার টাকার মাছও পাচ্ছে না। আমার দেখা অনেক ট্রলার মালিক ১০-১৫ লাখ টাকা লস দিয়েছেন এই এক মাসে। পোষাতে না পেরে এখন অনেকেই ট্রলার বন্ধ রাখছেন।
মৎস্য অবতারণ কেন্দ্রের পাইকারি মাছ বিক্রেতা ইউনুস গাজী বলেন, ট্রলিং বোটসহ, ঘোপ, বাদা ও নেট জালের কারণে ছোট বড় সব রকমের মাছে মেরে ফেলছে। আমাদের বাঙালিদের আগে বলতো মাছে-ভাতে বাঙালি, এখন আমরা বলি পানি-ভাতে বাঙালি। সাগরে মাছ না পাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে এই ট্রলিং বোট।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার জি এম মাসুম বলেন, জেলেরা সাগরে গিয়ে মাছ তেমন একটা পাচ্ছেন না। তারা খালি হাতেই ফেরত আসছেন। তাই পাথরঘাটা অবতারণ কেন্দ্রে কম আসছে মাছ। ফলে রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে। পাশাপাশি ইলিশ নাই বললেই চলে।