নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভোক্তা পর্যায়ে ডিম-মুরগির দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে দ্বিতীয় দফায় দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। কিন্তু এবারও ডিম-মুরগি আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম কিছুটা কমলেও মুরগির বাজার বাড়তি রয়েছে। এ অবস্থায় বিপাকেই পড়েছেন সাধারণ মানুষজন। সরকার নির্ধারিত দামের সঙ্গে বাজারের দাম না মেলার কারণে হতাশা প্রকাশ করছেন তারা। আর খুচরা বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, আমাদের হাতে কিছুই নেই। আড়ৎ থেকেই বাড়তি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার এবং মুদি দোকান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
ডিমের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, ডজনপ্রতি ডিম ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে করে প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে ১৪ দশমিক ১৬ টাকা থেকে শুরু করে ১৪ দশমিক ৫৮ টাকা। যদিও সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী প্রতিটি ডিম ১১ দশমিক ৮৭ টাকায় বিক্রির কথা ছিল। সে হিসাবে ডজন হওয়ার কথা ১৪২ দশমিক ৪৪ টাকা। ডিমের দাম আরও বেশি আবাসিক এলাকার মুদি দোকানগুলোতে। এসব দোকানে সরাসরি ৬০ টাকা হালি ডিম বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে পিস প্রতি ডিমের দাম পড়ছে ১৫ টাকা। এছাড়া আড়তে সাদা ডিম ডজন প্রতি ১৭০, হাঁসের ডিম ডজন প্রতি ২২০ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ডজন প্রতি ২১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে দ্বিতীয় দফায় ব্রয়লার মুরগির খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ দশমিক ৫৯ টাকা এবং সোনালী মুরগি ২৬৯ দশমিক ৬৪ টাকা দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। তবে বাজারে এই দামের কোনো প্রয়োগ দেখা যায়নি। দোকানিরা ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা এবং সোনালী মুরগি ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
সরকারি দামে ডিম বিক্রির বিশেষ কার্যক্রমের উদ্বোধন
অপরদিকে, ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে সরকারি দামে ডিম বিক্রির বিশেষ কার্যক্রম। ভোর ৪টায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলীম আখতার খান রাজধানীর কাপ্তান বাজারে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এর আগে বুধবার (১৬ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)।
জানা গেছে, রাজধানীতে অবস্থিত ডিমের প্রধান দুই পাইকারি বাজার তেজগাঁও ও কাপ্তান বাজারে প্রতিদিন ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করবে ডিম উৎপাদনকারি বড় খামারগুলো। এর মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকায় এ কার্যক্রম শুরু করা হলেও সারাদেশেই এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিপিআইসিসি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মসিউর রহমান বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোল্ট্রি স্টেকহোল্ডাররা একত্রে বসে ডিমের যৌক্তিক উৎপাদন খরচসহ উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ের পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিজনিত বন্যার কারণে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জেলার পোল্ট্রি খামারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দৈনিক প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডিমের উৎপাদন কমে যায়, ফলশ্রুতিতে চাহিদা ও জোগানের মাঝে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়।
তিনি আরও বলেন, দেশের এ সংকটকালীন সময়ে একটি মহল অতিরিক্ত মুনাফা লোটার চেষ্টা করলে ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। দেশ ও মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পোল্ট্রি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন ‘বিপিআইসিসি’ আগামী ১৫ দিনের যে বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তাতে খামার থেকে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১২ টাকায় পাওয়া যাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সরকারের বাজার তদারকি সংস্থা, ডিম উৎপাদনকারী বড় খামারি ও পাইকারি আড়ৎদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এ উদ্যোগকে সফল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ কার্যক্রমে ডিম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- কাজী ফার্মস, ডায়মন্ড এগস লিমিটেড, প্যারাগন পোল্ট্রি, পিপলস পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, নারিশ পোল্ট্রি, ভিআইপি শাহাদত পোল্ট্রি, নর্থ এগ লিমিটেড, নাবিল অ্যাগ্রো, আর আর পি, রানা পোল্ট্রি, চাঁদ অ্যাগ্রো, কৃষিবিদ পোল্ট্রি, চিত্রা অ্যাগ্রো, আমান পোল্ট্রি এবং মেগা পোল্ট্রি। আশা করা যাচ্ছে, আফিল অ্যাগ্রো এবং প্রাণ অ্যাগ্রো পরবর্তীতে এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হবে।