1. admin@krishisangbad.com : admin :
ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্পে অনিয়ম, দিনে এক গাড়ি ৮ বার মেরামত!!! - কৃষি সংবাদ
রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন

ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্পে অনিয়ম, দিনে এক গাড়ি ৮ বার মেরামত!!!

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৩ বার পঠিত

কৃষি সংবাদ ডেস্ক:

মৎস্য অধিদপ্তরের ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গাড়ি মেরামতের নামে আত্মসাৎ করা হয়েছে সরকারি টাকা। এক গাড়ি দিনে ৭-৮ বার পর্যন্ত মেরামত দেখিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার করা হয়েছে। এমনকি গাড়ি না থাকলেও মেরামত দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা বিল তুলে নিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট। ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়) এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তিসেবা সম্প্রসারণ প্রকল্প দুটির ৯টি গাড়ি মেরামত বাবদ ২৬ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা বিল দেখানো হয়েছে। ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্পের ৩টি গাড়ি মাত্র ৫ মাসে ৮০ বার মেরামত দেখানো হয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়)’ হাতে নেয় তৎকালীন সরকার, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৫৪২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল সরকারি ও বেসরকারি মৎস্য ডিম উৎপাদন খামারে গুণগতমানসম্পন্ন ব্রুড মাছ ও পোনা মাছ উৎপাদন এবং উন্নত কৌলিতাত্ত্বিক গুণসম্পন্ন কার্প ও দেশীয় ছোট প্রজাতির (এসআইএস) ব্রুড স্টক তৈরির মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। ব্রুড ব্যাংক স্থাপন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের ৭ বিভাগের ২৩ জেলার ২৭টি সরকারি মৎস্য ডিম উৎপাদন খামারকে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। কেনা হয় গাড়ি, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়) এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তিসেবা সম্প্রসারণ প্রকল্পের ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে গাড়ি মেরামত খাতে আর্থিক ক্ষমতার সীমাতিরিক্ত ব্যয়ের ফলে ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ ২০১৫-এর ৫ কলামের ৫ ও ৬ অনুযায়ী উন্নয়ন বাজেটের অধীনে ক এবং খ শ্রেণির প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকরা বাজেট বরাদ্দ থাকাসাপেক্ষে এক অর্থবছরে একটি গাড়ি মেরামতের জন্য অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে পারেন। অথচ এ দুই প্রকল্পে একটি গাড়ি মেরামতেই খরচ করা হয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট নথি, বিল-ভাউচার, গাড়ির তালিকা যাচাইয়ে দেখা যায়, ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্পের ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রকল্প মেয়াদের শেষ ৬ মাসে আর্থিক ক্ষমতার সীমালঙ্ঘন করে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৩৫৬০ নম্বরের গাড়ি মেরামত বাবদ ৩ লাখ ২৬ লাখ ৫৬০ টাকা, ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৩৪৩৭ মেরামত বাবদ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪০ টাকা ও ঢাকা মেট্রো-১-১৩-৪৫২৩ মেরামত বাবদ ১ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয় করা হয়। এছাড়া বিল-ভাউচারে গাড়ির নম্বর উল্লেখ না করে গাড়ি মেরামত বাবদ অনিয়মিতভাবে ২ লাখ ২০ হাজার ১০০ টাকা ব্যয় করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৩৫৬০ নম্বরের গাড়ি দিনে ৩ থেকে ৭ বার মেরামত দেখানো হয়েছে। ২০১৯ সালের আগস্টেই ৯ বার মেরামত করা হয়েছে একটি গাড়ি। এক দিনে (৭ আগস্ট) মাসুম অটোস, মামুন অটোস পার্টস, ঐতিহ্য মোটরস, প্রগতি মোটর ওয়ার্কশপ ও জাকিয়া ট্রেডার্সে মেরামত করা হয় একই গাড়ি। সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখ একই দিনে মামুন অটোস পার্টস, ঐতিহ্য মোটরসে ২ বার, প্রগতি মোটর ওয়ার্কশপে ২ বার, হাশেম কার ডেকোরেশন ও আলিফ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে মেরামত করা হয়েছে। এছাড়া ১৭ নভেম্বরে একই দিনে ৫ বার, অক্টোবরের ১৫ তারিখ একই দিনে ৩ বার, ডিসেম্বরের ৩ তারিখ একই দিনে ৫ বার মেরামত করা হয়েছে এক গাড়ি।
এছাড়া ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৩৪৩৭ নম্বরের গাড়ি ২০১৯ সালের নভেম্বরের ৩ তারিখ ৮ বার মেরামত করা হয়েছে। আবার সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখ গাড়ি না থাকলেও দিনে ৮ বার মেরামত দেখানো হয়েছে। কোনো গাড়ির নম্বর না থাকলেও সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে (বিল নং-৭০, ৭১, ৭২, ৭৬, ১০২, ১০৬, ১৩৬ ও ১৩৯) ২ লাখ ২০ হাজার ১০০ টাকার মেরামত দেখানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্পের ৩টি গাড়ি আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৫ মাসে ৮০ বার মেরামত করা হয়েছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, একই গাড়ি দিনে ৭ বার ৭টি ওয়ার্কশপে ঠিক করানো অসম্ভব। এ ধরনের বিল-ভাউচার শুধু টাকা লুটপাটের জন্য করা হয়েছে। গাড়ির শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট এভাবে বিল-ভাউচার করে টাকা লোপাট করেছে।

ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তিসেবা সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীন ৬টি উপপ্রকল্প পরিচালক এর কার্যালয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬টি গাড়ির মেরামত বাবদ ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যদিও ৬টি গাড়ির মেরামত বাবদ ৩ লাখ টাকা খরচের অনুমতি রয়েছে। সেখানে আর্থিক ক্ষমতাবহির্ভূতভাবে ব্যয় করা হয়েছে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
শুধু গাড়ি মেরামত বাবদ নয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহণ নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী সেবাক্রয়ের ক্ষেত্রে সেবামূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত পরিপত্র নম্বর-০৭.১৫৩.০২৯.০৭.০০.০১.২০১৯-২৫৯; ২০১৯ সালের ১০ জুনের অনুচ্ছেদ নম্বর ৩-এর শর্ত অনুসরণ করা হয়নি। আউটসোর্সিং কর্মচারীদের প্রাপ্যতাবিহীন প্রকল্প সহায়তা ভাতা নামে ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৬১৩ টাকা লোপাট করা হয়েছে।

প্রকল্পের নথি, চুক্তিপত্র, ক্যাশ বই বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, প্রকল্প সমাপ্তির শেষ দিন ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োগকৃত কর্মচারীদের প্রকল্প সহায়তা ভাতা বাবদ (বিল নম্বর-২৫৬) ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৬১৩ টাকা তোলা হয়েছে। অথচ আউটসোর্সিং জনবল সরবরাহকারী ঠিকাদারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিপত্রেও কর্মচারীদের প্রকল্প সহায়তা ভাতা প্রদানের কোনো শর্তের উল্লেখ নেই। ফলে প্রকল্প সহায়তা ভাতা বাবদ অর্থ পরিশোধের কোনো সুযোগ না থাকলেও টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে গায়েব করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তিসেবা সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আসলে এমন বিল করা সম্ভব নয়। যারা বিল করেছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। এক দোকানে একই দিনে হয়তো বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বারবার কিনতে যেতে পারেন।’ আপনি বিল দেখে সই করেন কি না- এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি প্রকল্প পরিচালক।

এদিকে এ নিয়ে কথা বলতে ব্রুড ব্যাংক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. সিরাজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, ‘ব্রুড ব্যাংক স্থাপন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তিসেবা প্রকল্পের বিষয়ে জেনে তারপর জানাতে হবে। কীভাবে এমন বিল করতে পারে, তথ্য সঠিক আছে কি না, তা জেনে আমি আপনাকে জানাতে পারব।’

সূত্র: প্রতিদিনের সংবাদ

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ কৃষি সংবাদ
Theme Customized By Shakil IT Park