ফেনী জেলা প্রতিনিধি:
ফেনীতে ডিমের বাজারে বেড়েছে অস্থিরতা। এই অস্থিরতা উদ্বেগের কারণ হয়েছে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিনের প্রোটিন চাহিদা পূরণে ডিমের ওপর নির্ভরশীল থাকা নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কাছে। জেলায় বন্যার প্রভাবে ডিমের উৎপাদন ৮০ শতাংশ কমেছে বলে দাবি করছে পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। অন্যদিকে শাক-সবজির দাম বাড়ায় ডিমের চাহিদাও বেড়েছে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) ফেনী শহরের বড় বাজার, সুলতান মাহমুদ পৌর হকার্স মার্কেট, মহিপাল, মুক্ত বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি ডজন লেয়ার মুরগির ডিমের দাম ২৫-৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতিটি লেয়ার মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৫ টাকা করে। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা পর্যন্ত।
শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাসানুল হক বলেন, প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কিন্তু আয় তো বাড়ছে না। গত মাসে যে ডিম প্রতি ডজন ১৪৫ টাকায় কিনেছি, তার জন্য এখন ২০-৩০ টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে। খাবার পাতে ঠিকমতো এখন ডিমও উঠছে না।
মাহমুদুল হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, পড়াশোনার জন্য শহরে এসে টিউশনি করে যে টাকা পাই তা দিয়েই পুরো মাস চলতে হয়। তুলনামূলক সস্তা আর সহজ খাবার হিসেবে ডিমের ওপর ভরসা করি। একটি ডিম ভাজি করে ডাল-ভাত খেয়ে কোনোমতে দিনযাপন করি। কিন্তু সেই ডিম কেনাও এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
বড় বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোস্তফা কামাল বলেন, পোল্ট্রি খামারগুলোতে ডিমের উৎপাদন আগের চেয়ে কয়েকগুণ কমেছে। পাশাপাশি মুরগির খাদ্য ও পরিবহন খরচ বাড়ায় ডিমের বাজারে প্রভাব পড়েছে। তবে দাম নির্ধারণে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। কেনা দাম থেকে অল্প কিছু লাভে আমরা ডিম বিক্রি করছি ।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, বন্যা পরবর্তী জেলায় প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯টি। কিন্তু দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে ৩ লাখ ৩ হাজার ৪০০টি। তার মধ্যে ফেনী সদরে ডিমের চাহিদা ১ লাখ ২০ বাজার, উৎপাদন হচ্ছে ৬২ হাজার, ফুলগাজী উপজেলায় চাহিদা রয়েছে ৪৯ হাজার ৯০০টি, উৎপাদন হচ্ছে ৩৯ হাজার, ছাগলনাইয়া উপজেলায় চাহিদা রয়েছে ৫৮ হাজার, উৎপাদন হচ্ছে ৪০ হাজার ডিম। এছাড়া পরশুরাম উপজেলায় চাহিদা ২৯ হাজার ১৪২টি, উৎপাদন ২৩ হাজার ২০০টি, দাগনভূঞা উপজেলায় ডিমের চাহিদা ৭২ হাজার ৬৮৬টি, উৎপাদন ৬৬ হাজার ৬৫০টি এবং সোনাগাজী উপজেলায় চাহিদা রয়েছে ৮২ হাজার ৮২১টি ও উৎপাদন হচ্ছে ৭২ হাজার ৫৫০টি ডিম।
জেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল আলম বলেন, এবারের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ডিমের উৎপাদন ৮০ শতাংশ কমেছে। মাত্র ২০ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে।
এর আগে তিনি বলেন, এবারের বন্যায় পোল্ট্রি খাতে আনুমানিক ৪০০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলায় ২০০ ডিলারের মাধ্যমে ৫ হাজার পোল্ট্রি খামারি মুরগি ও ডিম উৎপাদন করে আসছে। এগুলো ফেনীর স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে ঢাকা-চট্টগ্রামেও সরবরাহ করতো। কিন্তু আগস্টের ১০ দিন ধরে চলমান বন্যায় জেলার ৮০ শতাংশ পোল্ট্রি খামার সম্পূর্ণ ও ২০ শতাংশ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাক-সবজির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ ডিমের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যার কারণে চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে দামও বেড়েছে।
পাইকাররা বলছেন, বন্যার পর থেকে ফেনীর স্থানীয় খামারিদের ডিমের তেমন সরবরাহ নেই। এতে প্রতি পিস ডিমের দাম ৩ থেকে ৪ টাকা করে বেড়েছে। পোল্ট্রি খামার থেকে আমরা বেশিরভাগ ডিম কিনে থাকি। বন্যার কারণে খামারগুলোতে ডিমের উৎপাদন এখন আর আগের মতো নেই। এছাড়া মুরগির খাদ্যের দামও বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ডিমের বাজারে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, বন্যায় পোল্ট্রিফার্মগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে জেলায় আগের তুলনায় ডিমের উৎপাদন অনেকটা কমেছে। এছাড়া ডিমের দাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।