1. admin@krishisangbad.com : admin :
ডিম উৎপাদন তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি : নির্ধারিত দামে মিলছে না ডিম - কৃষি সংবাদ
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৩ অপরাহ্ন

ডিম উৎপাদন তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি : নির্ধারিত দামে মিলছে না ডিম

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৪ বার পঠিত

সুমন ইসলাম:

আজ বিশ্ব ডিম দিবস। কিন্তু দেশে ডিমের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় ডিমের উৎপাদন বেশি হলেও দেশে অতিরিক্ত তাপমাত্র, অতি বৃষ্টি এবং বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে ডিমের উৎপাদন কমেছে। ফলে বেড়েছে ডিমের দাম। তবে কেউকেউ অবশ্য ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেটকেই দায়ী করেছেন। ডিমের দাম কমানোর জন্য বাজার মনিটরিং ব্যবস্থার ওপরেও জোর দিয়েছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে ডিমের উৎপাদন ২,৩৭৪ কোটি ৯৭ লাখ পিস, যেখানে চাহিদা মাত্র ১,৮০৯ কোটি ৬০ লাখ পিস। ফলে চাহিদার তুলনায় ৩০ শতাংশ উদ্বৃত্ত রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা উৎপাদন সংকট তুলে ধরে ডিমের দাম প্রতিদিনই বাড়িয়ে চলেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ডজনপ্রতি দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত, বর্তমানে খোলাবাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। পাশাপাশি ভারত থেকে সাড়ে চার কোটি ডিম আমদানিরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন মাথাপিছু ডিম খাওয়ার পরিমাণ ১৩৬টি। সরকার ২০৩০ সালে বছরে ১৬৫টি ডিম খাওয়াতে চায়। দেশে প্রাণীজ আমিষের সহজলভ্য উৎস ডিমের উৎপাদন গত এক দশকে বেড়ে তিনগুন হয়েছে, কিন্তু মাঝেমধ্যেই কারণে-অকারণে দাম বেড়ে যাওয়ায় সবার জন্য তা আর সহজলভ্য থাকছে না।

প্রান্তিক খামারিরা অভিযোগ করছেন, দেশের পোলট্রি পণ্যের বাজারের সিংহভাগই বড় কয়েকটি কোম্পানির দখলে থাকায় তারা মূলত বাজারের গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করছে। যদিও ডিমের দাম বেশি, খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। বিভিন্ন বাজারে ফার্মের ডিমের হালি বিক্রি হয়েছিল ৫৮-৬০ টাকা করে, যেখানে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দাম ছিল ৪৮ টাকা। গত সপ্তাহেও ডিমের হালি ছিল ৫৫ টাকা।

ব্রিডার্স এসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে গড়ে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা সাড়ে ৫ কোটি। উৎপাদন হয় ৪ কোটি ৮০ লাখ। মোট উৎপাদনের মধ্যে হাঁস ও দেশীয় মুরগির ডিম বাদে বাণিজ্যিক ছোট বড় খামারগুলোতে ৪ কোটি পিস মুরগির ডিম উৎপাদন হয়। তাতে প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ ডিমের ঘাটতি রয়েছে।

আজ বিশ্ব ডিম দিবস:

‘ডিমে পুষ্টি ডিমে শক্তি, ডিমে আছে রোগ মুক্তি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে আজ পালিত হবে বিশ্ব ডিম দিবস ২০২৪। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এ দিনটিকে উৎযাপনের জন্য নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও ডিমের গুনাগুন সম্বলিত লিফলেট বিতরণ ও র‌্যালীর আয়োজন করা হয়েছে।

ডিমের উৎপাদন কমার বিষয়ে বন্যা কবলিত ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে জানাগেছে, বন্যা পরবর্তী জেলায় প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯টি। কিন্তু দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে ৩ লাখ ৩ হাজার ৪০০টি। তার মধ্যে ফেনী সদরে ডিমের চাহিদা ১ লাখ ২০ বাজার, উৎপাদন হচ্ছে ৬২ হাজার, ফুলগাজী উপজেলায় চাহিদা রয়েছে ৪৯ হাজার ৯০০টি, উৎপাদন হচ্ছে ৩৯ হাজার, ছাগলনাইয়া উপজেলায় চাহিদা রয়েছে ৫৮ হাজার, উৎপাদন হচ্ছে ৪০ হাজার ডিম। এছাড়া পরশুরাম উপজেলায় চাহিদা ২৯ হাজার ১৪২টি, উৎপাদন ২৩ হাজার ২০০টি, দাগনভূঞা উপজেলায় ডিমের চাহিদা ৭২ হাজার ৬৮৬টি, উৎপাদন ৬৬ হাজার ৬৫০টি এবং সোনাগাজী উপজেলায় চাহিদা রয়েছে ৮২ হাজার ৮২১টি ও উৎপাদন হচ্ছে ৭২ হাজার ৫৫০টি ডিম।

ফেনী জেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল আলম বলেন, এবারের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ডিমের উৎপাদন ৮০ শতাংশ কমেছে। মাত্র ২০ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে।

ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, বন্যায় পোল্ট্রিফার্মগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে জেলায় আগের তুলনায় ডিমের উৎপাদন অনেকটা কমেছে।

ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সরকার চুপ থাকায় ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে বাজার অস্থির করছেন।

সিন্ডিকেটে বাড়ছে দাম:

দেশে বর্তমানে দৈনিক সাড়ে চার কোটি ডিমের চাহিদা থাকলেও ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, দৈনিক চার কোটি পিস উৎপাদন হচ্ছে। অথচ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডিমের চাহিদা ছিল ১,৮০৯ কোটি ৬০ লাখ পিস এবং উৎপাদন হয়েছে ২,৩৭৪ কোটি ৯৭ লাখ পিস, উদ্বৃত্ত ছিল ৫৬৫ কোটি ৩৭ লাখ পিস। আগের অর্থবছরেও চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি ছিল, উদ্বৃত্ত ছিল ৫৩১ কোটি ১৫ লাখ পিস। ২০২১-২২ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরেও চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি ছিল।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, দিনে চার কোটি ডিমের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হয় সাড়ে চার কোটি পিস। বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করছে, যা মুরগির ফিড ও একদিনের মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণ করছে।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ দাবি করছেন, আমরা দিনে মাত্র ১৪-১৫ লাখ ডিম সরবরাহ করি, তাই দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ নেই।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:

বাজার মনিটরিং ও সমন্বয় প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বাপন দে। তিনি বলেন , প্রতি পিস ডিমে নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩-৪ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক না। ছয়-সাতবার ডিম হাতবদল হচ্ছে, ফলে উৎপাদনকারী কম লাভ পাচ্ছেন, কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়ে যাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে বাজার মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ কৃষি সংবাদ
Theme Customized By Shakil IT Park