1. admin@krishisangbad.com : admin :
কৃষি শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন : শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিটি প্রধান - কৃষি সংবাদ
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ন

কৃষি শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন : শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিটি প্রধান

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৭৮ বার পঠিত

সুমন ইসলাম:

শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিটির প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কৃষি কাজে নারীর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। অথচ প্রায় সময়েই দেখাযায় নারী পুরুষের মজুরি বৈষম্য। এখন সময় এসেছে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ কৃষি শ্রমিকরা বছরের তিন মাস কাজ পেলে আর ছয় মাস কাজ পায় না। কাজ না থাকলে মজুরিও পায়না । অথচ তারা আমাদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে। যখন কৃষিতে কাজ থাকে না তখন তাদের জন্য বিকল্প চিন্তা করতে হবে। তাদেরও নিম্নতম মজুরি ঠিক করতে হবে। কেউ যেন এই কৃষি শ্রমিক হিসেবে ঠকে না যায়। সবমিলিয়ে মজুরির একটা মানদন্ড ঠিক করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে জাতীয় নিম্নতম মজুরির মানদন্ড আছে তার উপর ভিত্তি করে মজুরি বোর্ড বিভিন্ন সেক্টরের জন্য মজুরি ঠিক করে। তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের শ্রমিকের জন্য মজুরি নির্ধারণ করে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, যে নারী কৃষির অগ্রদূত, যে নারী আমাদের কৃষি, সমাজ ও সংসারকে মহিমান্বিত করেছেন জীবনের সবটুকু বিনিয়োগ দিয়ে; তার কষ্টগাথা আসলেই এখনো অমানবিক। দেশে বর্তমান জনসংখ্যার অনুপাত হলো ১০৬:১০০। এ দেশে ৮৫ শতাংশ নারীর উপার্জনের স্বাধীনতা নেই। মাত্র ১৫ শতাংশ নারী নিজের ইচ্ছায় উপার্জনের স্বাধীনতা পান। আর যারা আয় করেন, তাদের প্রায় ২৪ শতাংশ এরই নিজের আয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই।

আমাদের দেশে ৯২শতাংশ পরিবার পুরুষ শাসিত আর মাত্র ৮শতাংশ পরিবার নারী শাসিত। শহরের তুলনায় গ্রামের নারীদের প্রভাব একটু বেশি। সাধারণভাবে শিক্ষার হার পুরুষ ৪৫.৫ শতাংশ আর মহিলা ২৪.২শতাংশ। শহরে একটু ভিন্ন। শহরে ৫২.৫শতাংশ আর গ্রামে ২০.২০শতাংশ। একই পরিমাণ সময় একসঙ্গে কাজ করার পর পুরুষরা নারীদের চেয়ে বেশি মজুরি পান, অথচ দেখা যায় নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি কাজ করেন।

মোট নারীদের মধ্যে ৭১.৫শতাংশ কৃষি কাজে নিয়োজিত আর সে তুলনায় ৬০.৩শতাংশ পুরুষ কৃষি কাজে নিয়োজিত। মোট কৃষি ৪৫.৬শতাংশ বিনা মূল্যে নারীরা শ্রম দেন আর বাকি ৫৪.৪শতাংশ শ্রম টাকার বিনিময়ে কেনা হয়। জমির মালিকানায় পুরুষের আছে ৮১শতাংশ। আর নারীর মাত্র ১৯শতাংশ।

কৃষিতে নারীর সংশ্লিষ্টতা ও অবদান ব্যাপক। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হলো- বীজ সংরক্ষণ; বীজ বাছাই, শোধন ও অঙ্কুরোদগম বীজ শোধন; বীজতলায় বীজ বপন; চারা তোলা; চারা রোপণ; কৃষি পঞ্জিকা পুষ্টিসম্মত রান্না কৌশল; খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ; কর্তন উত্তর কৌশল; শস্য সংরক্ষণ; কৃষি উৎপাদন পরিকল্পনা; কৃষি শ্রমিক ব্যবস্থাপনা; জৈবকৃষি; মুরগি পালন; হাঁস পালন; ছাগল পালন; গরু পালন; দুধ দোহন; গরু মোটাতাজাকরণ; ডিম ফোটানো; হাঁস-মুরগি পালন; বসতবাড়িতে শাক-সবজি ফল ফুল চাষ; ভেষজ চাষ; কবুতর পালন; কোয়েল পালন; নার্সারি ব্যবস্থাপনা; মাতৃগাছ ব্যবস্থাপনা; মৌচাষ; শীতল পাটি বা হোগলা তৈরি; অঙ্গজ বংশবিস্তার; বায়োগ্যাস কার্যক্রম; বনসাই বা অর্কিড বা ক্যাকটাস চাষ; কুল বার্ডিং; খাঁচায় মাছ চাষ; পুকুরে আধুনিক উপায়ে মাছ চাষ; জ্যাম জেলি আচার কেচাপ স্যুপ আমসত্ত্ব তালসত্ত্ব; মাছের সাথে হাঁস-মুরগির চাষ; ভাসমান সবজি চাষ; ঘাস চাষ; উন্নত চুলায় রান্না; কুটির শিল্প; মাশরুম চাষ; আলুর কলার চিপস; চানাচুর তৈরি; ছাদে বাগান; বাহারি মাছ; পারিবারিক শাক-সবজি সংগ্রহ; পারিবারিক শাক ফল-মূল সংরক্ষণ; জ্বালানি সংগ্রহ; কৃষি বনায়ন; সামাজিক বনায়ন–এর সবগুলোতেই নারী সংশ্লিষ্ট।

নারী শ্রম শক্তির মধ্যে ৬৮ শতাংশই কৃষি, বনায়ন ও মৎস্য খাতের সঙ্গে জড়িত। কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে কৃষিকাজে সবচেয়ে বেশি নারী নিয়োজিত আছেন। যা দিন দিন আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।এখানে একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাপক তরুণী নিজেকে আধুনিক কৃষিতে আত্মনিয়োগ করছেন। পাশাপাশি এদেশে তৈরি হচ্ছে উল্লেখযোগ্য কৃষি নারী উদ্যোক্তা। ফসলের প্রাক বপন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন, বীজ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এমনকি বিপণন পর্যন্ত অনেক কাজ নারী এককভাবেই করে। বলা চলে কৃষি ও এর উপখাতের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে নারী।

আধুনিক কৃষি তথা কৃষিতে ডিজিটালাইজেশনেও বাংলাদেশের নারী কৃষকরা প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের বর্তমানে ১৪ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এবং ৬৪ শতাংশ গ্রামীণ নারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের নারী কৃষাণীরা বিভিন্ন রকমের আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারেও দিন দিন সচেষ্ট হচ্ছেন।

কৃষিকাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৩৭ লাখ থেকে বেড়ে প্রায় ৮০ লাখ হয়েছে। এ বৃদ্ধির হার ১১৬ শতাংশ। যদিও এসব নারী শ্রমিকের ৭২ শতাংশই অবৈতনিক পারিবারিক নারী শ্রমিক। ৭৭ শতাংশ গ্রামীণ নারী কৃষিসংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত থাকলেও তাদের স্বীকৃতি সেভাবে নেই। কৃষিতে কিষাণীর অবদান কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।

শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলেন, কৃষিখাতের ২১টি কাজের ধাপের মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ ১৭টি ধাপে। কৃষি কাজে নারীর স্বীকৃতি মর্যাদা, সম্মান, জাতীয় কৃষকনীতি ও নারী কৃষক এবং নারী কৃষক সংগঠন তৈরি এখন সময়ের দাবি।

নারী কৃষি শ্রমিকদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদান, একই ধরনের কাজে পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করা, বেশি কাজে বেশি সম্মান স্বীকৃতি, সরকারি কৃষি কর্মকাণ্ডে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া, কৃষিকাজে নারী শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, প্রান্তিক সুবিধাদি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নারী কৃষি শ্রমিক তথা কৃষাণীদের অগ্রাধিকার দেওয়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ এখন নীতি নির্ধারকের হাতে।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ কৃষি সংবাদ
Theme Customized By Shakil IT Park